১৪ এপ্রিল, ২০২৩

আজ বাঙালির নবপ্রাণের মাস ‘বৈশাখ’

আজ বাঙালির নবপ্রাণের মাস ‘বৈশাখ’
রাঙা ফাগুনের ছোয়ায় তেজে ভরা ছিল চৈত্র। প্রথম থেকে চৈত্রের আচরণ ছিল বেশ অচেনা। শুরতে তেমন কিছু মনে না হলেও শেষের দিনগুলো ছিল খুব ঝাঝালো। গরমে বসন্তের রং চৈত্র সংক্রান্তিতে অনেকটাই মিলে যাওয়ার মতো। এখন হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা ঐতিহ্যের আজ ১৪৩০ সাল। পুরানো স্মৃতি দূর করে নতুনের কেতন উড়িয়ে বৈশাখ এসেছে বাংলাকে নবরূপে সাজাতে । এতে বাঙালির মন হয়ে ওঠে আরও যৌবনময়ী। সব গ্লানি ধুয়েমুছে বাঙালি ফিরে পায় এক নবপ্রাণ। আজ সারাদেশ মেতে উঠবে নতুন সূচনায়। বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বর্ষবরণের মহা আয়োজনে মেতে উঠবে গোটা দেশ। বর্ষবরণে মেতে উঠবে দেশের বাইরে থাকা বাঙালিরাও। হাজার বছরের ইতিহাসে বর্ষবরণের আবেগ গেঁথে আছে বাঙালিয়ানদের মনে মনে। এই দিনটিকে ধরেই গ্রামের মানুষ এখনো তাদের জীবনপঞ্জিকা সাজানোর পরিকল্পনা পরিকল্পনাবদ্ধ। এদিন বাঙালি হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে স্বজনের বন্ধনে মিলে যায়। নানা স্বাদের আপ্যায়ন চলে দিনভর। চলে পান্তা উৎসবের মহাযজ্ঞ। সাম্প্রতিক বছরগুলোত বৈশাখ উৎসবে যোগ হয়ে জাতীয় মাছ ইলিশও। যদিও বিষয়টি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। এবছর মুসলমান ধর্মাবলম্বিদের সিয়াম সাধনার মাস চলায় এসব আচারে পড়বে ভাটা। ইতিহাস বলে বর্ষবরণের রূপায়নও রাজনৈতিক। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করতো। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলতো না। এতে অসময়ে কৃষকদের খজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হতো। বিশেষ এক বিড়ম্বনায় পড়তো সেসময়ের বাঙালিরা। এজন্য খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। তবে তখন থেকে অসহায় বাঙালির জন্য এক স্বস্তির অধ্যায় শুরু করেন। বাঙালির প্রাণের উৎসবে প্রাণ ফিরে পায় নতুন ভাবে। তখন সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ সালের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। এখন আমরা নানা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে বৈশাখ পালন করে থাকি। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার আশে পাশের বিভিন্ন সড়ক আজ বন্ধ থাকবে। সরকারিভাবে দিনটি উৎযাবনে বাধ্যতামূলক নিরদেশনা থাকলে রমজানের কারনে সেটি আর থাকছে না। বিকেল ৪ টা নাগাদ রমনার বটমুল ছাড়তে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাউন্ড সিস্টেম থাকবে খুবই স্বাভাবিক। কোনোভাবেই যেন ইসলামের উপর প্রভাব না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখার নিরদেশ দিয়েছে সরকার।