কুমিল্লার তিতাসে ছেলে ও নাতি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় নিজ গ্রামে শায়িত হতে পারেনি মরহুম মোহন ভূঁইয়া দম্পতি। এমন অভিযোগ করেন মরহুম মোহন ভূঁইয়ার পরিবার।
অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লার পুত্র ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি জহির মোল্লার হত্যা মামলায় আসামী হন একই ইউনিয়নের মানিককান্দি গ্রামের মোহন ভূঁইয়ার ছেলে বাতেন ও নাতি মহাসিন।
ছেলে ও নাতি আসামি হওয়ায় বাদী পক্ষের অত্যাচার ও নির্যাতনে বাড়ি-ঘর ছাড়া হোন মোহন ভূঁইয়ার পুরো পরিবার।
আশ্রয় নেন বড় মেয়ের বাড়ি হোমনা উপজেলার ভাষানিয়া ইউনিয়নের ওমরাবাদ গ্রামে। সেখানেই ৯৫ বছর বয়সে গত ২৬ আগস্ট ২০২৩ই তারিখে মোহন ভূঁইয়া ও একই বছরের ৭৫ বছর বয়সে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে তার স্ত্রী জাহানারা বেগম মৃত্যু বরণ করেন।
মৃত্যুর পর মরহুম মোহন ভূইয়া দম্পতির লাশ তার নিজ গ্রামে দাফন-কাপন করার জন্য এলাকাবাসীর সাথে যোগাযোগ করেন মোহন ভূঁইয়া পরিবার। কিন্তু বাদী পক্ষের ভয়-ভীতিতে নিজ গ্রামে শায়িত হতে পারেনি মরহুম মোহন ভূঁইয়া দম্পতি। পরে তাদেরকে দাফন করা হয় মেয়ের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে।
এছাড়াও মরহুম মোহন ভূঁইয়া দম্পতি মৃত্যুর পূর্বে নিজ বাড়ি মানিককান্দিতে আসার জন্য এবং নিজের ভিটা বাড়ি দেখার জন্য প্রতিনিয়ত কান্না করতেন। কিন্তু বাদী পক্ষের ভয়ে ছেলে-মেয়ে ও স্বজনরা নিয়ে আসেননি।
অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, মোহন ভূইয়ার বাড়িতে ছাগল চরাচ্ছে এক বৃদ্ধ এবং বাড়িতে থাকা ৩টি টিনের ঘর ও একটি সেমিপাকা ঘরে থাকা আসবাবপত্র, বেড়ারর টিন, চৌকাট সবই নিয়ে গেছে এবং চালের টিন গুলোকেও কুপিয়ে ছিদ্র করে ফেলে রেখেছে দুষ্কৃতকারীরা।
এদিকে মোহন ভূঁইয়ার ছেলে মনির ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, যুবলীগ নেতা জহির হত্যার সাথে আমরা জরিত না থাকা সত্ত্বেও শত্রুতা করে বাদী পক্ষ আমার এক ভাই ও আমার এক ছেলেকে আসামি করেছে।
এবং জহির হত্যার পরপরই বাদী পক্ষের লোকজন আমাদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে সব নিয়ে যায় এবং আমার বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পুরো পরিবারকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বাধ্য করে।
এখানেই ক্ষান্ত হয়ননি তারা শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য আমার বৃদ্ধ বাবা মাকেও নিজ গ্রামে মাটি দিতে পারি নাই। আমরা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাই, আমরা যেনো আগের মতো আমাদের বাড়িতে ছেলে-মেয়ে ও পরিবার নিয়ে বসবাস করতে পারি।
অন্যদিকে যুবলীগ নেতা জহির হত্যার বাদী এসহাক মোল্লা বলেন, আমার ভাই জহির হত্যার সাথে মোহন ভূঁইয়ার ছেলে ও নাতি জরিত। কিন্তু আমরা তাদের উপর কোন নির্যাতন এবং তাদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেনি।
এছাড়াও মোহন ভূঁইয়া ও তার স্ত্রীকে আমরা মাটি দিতে বাঁধাও দেই নাই। তারা কবে মারা গেছে এবং কোথায় মাটি দিছে তাও আমরা জানি না। আমি প্রশাসনের কাছে আমার ভাইয়ের হত্যার সঠিক বিচার চাই।
এবিষয়ে তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ সুধীন চন্দ্র দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদী পক্ষের জন্য মোহন ভূঁইয়া ও তার স্ত্রীকে এলাকায় মাটি দিতে পারে নেই এমন কোন অভিযোগ আমার কাছে কেউ করে নাই। এবং এবিষয়ে আমার কাছে মোহন ভূঁইয়া পরিবার থেকে কোন সহযোগীতাও চায় নাই।
উল্লেখ্য, গত বছর ৬ ডিসেম্বর উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল মোল্লারর ছেলে যুবলীগ নেতা জহির মোল্লাকে দিনেদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
পরে এই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই এসহাক মোল্লা ৪৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তিতাস থানায়। ওই মামলায় মরহুম মোহন ভূইয়ার ছেলে বাতেন ও নাতি মহাসিনকে আসামী করা হয়।