ঝালকাঠিতে চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে জনসাধারণ স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। বিদ্যুতের চাহিদা ১০ মেগাওয়াট থাকলেও দেয়া হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৪ মেগাওয়াট।
৩০ মিনিটের মধ্যে ৪ বার বিদ্যুতের লোশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে পানি স্রবরাহ বন্ধ থাকায় গ্রহকদের পানি ও বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হচ্ছে দিনে ও রাতের বেশির ভাগ সময়।
গত ১ সপ্তাহ ধরে এ অচলাবস্থা চলছে। কর্তৃপক্ষ বলছে জাতীয় গ্রীড থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ সমান ভাগে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের কিছুই করার নেই।
ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সদস্য আর টিভির জেলা প্রতিনিধি মো. জলিল জানান, গত ১ সপ্তাহ ধরে ঝালকাঠিতে অতিরিক্ত লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে বন্ধ থাকছে পানি সরবরাহ। এতে গ্রাহকরা পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারছেনা।
কৃষ্ণকাঠি এলাকার গৃহ বধু জাহানারা বেগম জানান, বিদ্যুৎতো পাই না। তার সাথে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় আমাদের কোন কাজ করাই সম্ভব হচ্ছেনা। এ ভাবে চলতে থাকলে মানুষ পানি বিদ্যুতের দাবিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। ঝালকাঠির আড়ৎদ্দার পট্টির ব্যবসায়ি জলিল হাওলাদার বলেন, গড়মে ব্যবসা বিণজ্য বন্ধ হাবার উপক্রম।
অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুতের অপেক্ষা করতে করতে দিনের বেশির ভাগ সময় চলে যাচ্ছে। ঝালকাঠির আইনজীবী আনোয়ার হোসেন আফজাল জানান, আদালতের কার্যক্রমসহ দৈনন্দিন হাজিরা, কম্পিউটারে মামলার বর্ননাসহ কোন কাজই করা যাচ্ছেনা বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে।
তবে ঝালকাঠির অপর উপজেলা সমূহ, বরিশাল, পিরোজপুরসহ পার্শবর্তি কোন জেলা বা উপজেলায় এতো বেশি লোডশেডিং হচ্ছেনা বলে খোজ নিয়ে জানা যায়।
সোমবার এ বিষয়ে বরিশাল রুপাতলী ওজোপাডিকোর কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তি ০১৩১৪৮৬৮২৬৪ নম্বর থেকে নাম প্রকাশ না করে বলেন, ঝালকাঠিতে সাড়ে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে এই মুহুর্তে। চাহিদা আছে ১০ মেগাওয়াট। এ কদিন ধরে বিদ্যুতের খুব খারাপ অবস্থা চলছে। এ অবস্থা স্বাভাবিক হতে আরো ৪/৫ দিন লাগবে।
ঝালকাঠি ওজোপাডিকো নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ রহিম বিদ্যুতের এই অচলাবস্থার বিষয়ে প্রথমে কোন কথা বলতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, আমাদের এখানে মোট চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছি। তা দিয়ে আমি ঝালকাঠি শহরের ৫টি ফিডারের মধ্যে ১টি ফিডার বন্ধ রেখে ৪টি ফিডার চালু রাখতে পারছি।
কিন্তু প্রতিটি ফিডারেই ১০ মিনিটের বেশি বিদ্যুৎ না থাকার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন যখন জাতয়ি গ্রীড থেকে বেশি লোড দেয়া হয় তখন অল্প বিদ্যুৎ দিয়ে সমন্বয় করা ছাড়া উপায় থাকেনা।
তিনি ঝালকাঠির অতিরিক্ত লোশেডিংয়ের বিষয়ে বরিশাল গ্রীড জোনের লোড বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, ঝালকাঠিতে ২শ কোটি টাকার একটি গ্রীড প্রকল্প দীর্ঘ দিনেও বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।
এটি নির্মিত হলে আজকের এই লোডশেডিং এর জন্য বসে থাকতে হতো না। অথচ ঝালকাঠির প্রস্তাবিত প্রকল্পটির জটিলতা দূর করতে কেউ কোন কথা কলছেনা।
এরপর বরিশাল গ্রীড জোনের লোড বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামানের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঝালকাঠির চাহিদা কত এবং লোডশেডিং কত মেঘাওয়াট দেয়া হয় সে সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্যই দিতে পারেনি।
তিনি আরো জানান ঝালকাঠিতে এই বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে একটি গ্রীড নির্মানের জন্য জমি মালিকদের বাঁধার কারণে কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছেনা।
বরিশাল নর্থ থেকে ডাবল সার্কিট লাইন এসে সরাসরি ঝালকাঠির গ্রীডে ডুকবে। ১ লাখ ৩২ হাজার ভোল্টেজের ২ টা লাইন এ গ্রীডে সংযোগ হবে। এতো দিনে কার্যক্রম শুরু হলে এই লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনায় পরতে হতো না।
তিনি জানান দেশব্যাপি লোডশেডিং আছে কিছুটা। এর প্রভাব সব জেলাতেই পরছে। জাতীয় লোড ডেসপাস শাখা থেকে ঝালকাঠির লোড বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অনুযায়ি ঝালকাঠির ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ ফিডারে লোড দিয়ে থাকেন।
যেটা আমার জানার বা দেখার কথা না। একপর্যায়ে তিনি অন্য ফোনে ঝালকাঠির বিদ্যুতের চাহিদা কত সরবরাহ হচ্ছে কতটুকু জানার চেষ্ঠা করেও ব্যার্থ হন। ৩০ মিনিট পরে তিনি তথ্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এরপর আর মোবাইল রিসিভ করেননি।