
করের জালে স্বপ্নের বাজেট; প্রভাব পড়বে নিম্ন আয়ের মানুষের উপর
২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে বাজেটে চাপ বাড়বে নিম্ন আয়ের মানুষের। সাংসারিক খরচ বাড়বে তিনগুন। এমনিতেই চোখে অন্ধকার দেখছে নিম্ন আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। দ্রব্য-মূল্যের উর্ধ্বগতি গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে এসব মানুষের কাছে। নতুন অর্থ বছরের ব্যায়ের বাজেট যেমন বড় আয়ের বাজেটও তেমন বড়।
অর্থমন্ত্রী আ হ,ম মুস্তাফা কামাল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নিমিত্তে এক চালেঞ্জিং বাজেট পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট সংসদে উত্থাপিত হবে। যেখানে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে তিনি এ বাজেট নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী।
এ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ককর বা ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে পড়ালেখার কলম থেকে শুরু করে ফেসিয়াল টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, সিমেন্ট, কাজু বাদাম, বাসমতি চাল, চশমা, মাইক্রোওয়েব ওভেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, প্লাস্টিকের পাত্র, অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, সিগারেট, জর্দা-গুল, খেজুর, বিদেশি টাইলস ও মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কেননা বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের জন্য এসব প্রসাধনী পন্য ও নিত্য পণের ওপর রাজস্ব বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
এখানেই শেষ নয়। নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও সহ ভ্রমন খরচেও পড়বে এর প্রভাব।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, আগামী ১ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট দেবেন অর্থমন্ত্রী, সেখানে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আর সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ হিসেবে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরা হতে পারে।
এছাড়া ধূমপায়ীদের জন্য এবছরও বাজেটে দুঃসংবাদ থাকছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যমস্তরের (স্টার, নেভি) সিগারেটের দাম ১৩৪ টাকা, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) সিগারেটের দাম ২২৬ টাকা এবং অতিউচ্চ স্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি পানের জর্দা-গুলের দামও বাড়ানো হতে পারে। তবে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত অর্থবছরের বাজেটে সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে ভর্তুকি বাবদ বাড়তি বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল।
পরবর্তীকালে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে।
এরমধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ১৭ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
যুগোপযোগি প্রস্তাবিত বাজেট হলেও বেশীভাগ ক্ষেত্রেই এর মাসুল দিতে হবে সাধারন মানুষকে। কেননা যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কিংবা বাড়বে সে হিসাবে মজুরী বাড়ে নি। বিশেষ করে বেসরকারি ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির চাকুরিজীবির মাসিক বেতন ও দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের পরিমান বাড়ে নি। বরং দিনের পর দিন বেড়েছে ব্যয়ের পরিমান। যার জন্য বেশীভাগ ভুগতে হবে দেশের সাধারন আম জনতাকে।