
—ছবি মুক্ত প্রভাত
জামালপুরের সরিষাবাড়িতে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘ ১৩ মাস বন্ধ থাকার পর পুন:রায় গ্যাস সরবরাহ করায় সার উৎপাদন শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) সকালে ফায়ারিং এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে ফিরে কারখানাটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যমুনা সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন। এদিকে, এক বছরেরও বেশী সময় পর কারখানা চালু হওয়ায় কারখানা সংশ্লিষ্টসহ স্থানীয় এলাকাবাসিদের মাঝে আনন্দ, উল্লাস বিরাজ করছে।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, যমুনা সার কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সার উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২ থেকে ৪৩ পিএসআই গ্যাসের চাপের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন আন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কেম্পানি গ্যাস সংকটের কারণে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় গত ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয়।
সেদিন থেকেই সার উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে করে বেকার হয়ে পড়ে কারখানা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, কর্মচারী, পরিবহণের মালিক, চালক, কারখানার আশেপাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল, রেস্টুরেন্টের মালিকরা।
কারখানা বন্ধ থাকাকালীন সময়ে দেশের বাইরে থেকে আমদানি ও দেশের অভ্যন্তরের অন্য সার কারখানায় উৎপাদিত ইউরিয়া সার ডিলারদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো। তবে কৃষকদের মাঝে এসব সারের চাহিদা কম থাকায় ডিলাররা পড়েন বিপাকে। গত এক বছরে কারখানাটি চালুর দাবীতে বেশ কয়েক দফা বিক্ষোভ ও আন্দোলন কর্মসুচি পালন করে আসছিল কারখানা সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা।
জানাযায় দৈনিক ১৭শ মেট্টিক টন সার উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে ১৯৯১ সালে কারখানাটি সরিষাবাড়ির তারাকান্দিতে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৯শ ডিলারের মাধ্যমে জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইলসহ, উত্তরাঞ্চলের ২১টি জেলার ১৬২ উপজেলায় কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ করে আসছিল।
কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে গ্যাসের চাপের স্বল্পতা এবং কারখানার বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটির কারণে সার উৎপাদন নেমে আসে দৈনিক ১২শ মেট্টিক টনে।
দীর্ঘ ১৩ মাস পর আবারও কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন আন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কেম্পানি। তারপর থেকেই কারখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে।
যমুনা সার কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় এ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ খুশি হয়েছে। আমরাও গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় সার আমদানি নির্ভরতা থেকে সরে দেশীয় শিল্পকে সচল রাখলে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
যমুনা সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন জানান, গ্যাস সংকটের কারনে গত ২৪সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে কারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গত১৩ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকালে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন আন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ শুরু করে।
তাই ১৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার সকাল ১১টায় কারখানার সার উৎপাদন প্ল্যান্টের চুল্লিতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়, যাকে ‘ফায়ারিং’ বলে। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সার উৎপাদন শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন ৪২ থেকে ৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন হয়। সার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন যান্ত্রিক বা কারগরি ত্রুটি দেখা না দিলে এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকলে পুরোদমে সার উৎপাদন শুরু হতে আগামী ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, যমুনা সার কারখানা প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম দীর্ঘসময় ধরে কারখানাটি বন্ধ ছিলো। সর্বশেষ কারখানাটি ২০২৩ সালে একটানা ৭২ দিন বন্ধ থাকার পর ওই বছরের ১৭ নভেম্বর চালু হয়েছিল। কিন্তু উৎপাদনে থাকা অবস্থায় ৬০ দিনের মাথায় গ্যাস সংকটে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।