
গুরুদাসপুর (নাটোর): এভাবেই বর্জ্য ফেলে নদী দূষণ করা হচ্ছে।—ছবি মুক্ত প্রভাত
শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পৌরসভার বর্জ্য। ব্যস্ততম সড়ক আর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফেলা এসব বর্জ্যরে দুর্গন্ধে নাকাল পথচারী-স্থানীয় বাসিন্দারা। মানুষের দুর্ভোগের পর এবার পৌরসভার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নন্দকুঁজা নদীও। প্রথম শ্রেণির গুরুদাসপুর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এমন নাজেহাল অবস্থা।
১৯৯১ সালে গুরুদাসপুর ‘পৌরসভার’ স্বীকৃতি পাওয়ার পর ২০০৫ সালে এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। অথচ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার ২০ বছরেও একটি ডাস্টবিনও স্থাপন করতে পারেনি। ফলে পৌরসভায় সৃষ্ট বর্জ্য যত্রতত্রভাবে ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে অব্যহতভাবে।
পৌরসভা বলছে— ১১ বর্গ কিলোমিটারের এই পৌরসভার আওতায় উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত চাঁচকৈড় হাট, গুরুদাসপুর বাজারসহ ছোট ছোট বাজার রয়েছে। বসতি রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের। চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র এই শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে আত্রাই, গুমানী ও নন্দকুঁজা নদী।
গুরুদাসপুর (নাটোর): এভাবেই বর্জ্য ফেলে নদী দূষণ করা হচ্ছে।—ছবি মুক্ত প্রভাত
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, ৫০ হাজার মানুষের জন্য এই পৌরসভাটিতে ৩৪ বছরেও একটি ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়নি। স্থায়ি-অস্থায়িভাবে নির্মাণ করা হয়নি ‘ড্যামিং স্টেশন’। এতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা। দখল-দূষণে ভরাটের কবলে পড়েছে খরস্রোতা নন্দকুঁজা ও গুমানী নদীও।
ব্যবসায়ী এনামুল, মজিত, বজলুসহ অন্তত ৫০জন বলেন, নন্দকুঁজা নদীর তীর ঘেঁষেই চাঁচকৈড় হাট। হাটের উত্তরঅংশে নদী তীর দখল করে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে পাকা সড়ক। এই সড়কের ওপরই বসে বাঁশ-কাঠ, ধান, রসুন, মাংসসহ গরু-ছাগলের হাট। রয়েছে মুরগী বাজার, মাছের আড়ত, পৌর শৌচাগারও। শুধু পৌর শহর আর মহল্লার বর্জ্য নয় এসব হাট-বাজারের বর্জ্যও হরহামেশাই ফেলা হয় নন্দকুঁজার পেটে।
তারা বলেন, নন্দকুঁজা নদী ছাড়াও পৌর শহরের গুরুদাসপুর বাজার ভূমি অফিসের সামনে, চাঁচকৈড় প্রফেসর পাড়া মহল্লার পাকা সড়ক ঘেঁষে এবং পৌরসভার অদূরে চলনালী হরিজন পল্লীর পাশের পাকা সড়ক ঘেঁষে ব্যপক আকারে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য ফেলা এসব এলাকা ঘণবসতিপূর্ণ এবং ব্যস্ততম। এভাবে খেয়ালখুশিমতো বর্জ্য ফেলায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। দূর্গন্ধের পাশপাশি নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পৌরসভার বর্জ্যে দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষের। পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে পরিবেশ বান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থপনা তৈরির দাবি তাদের।
বিলচলন শহীদ সামসুলজ্জোহা সরকারি অনার্স কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাট-বাজারে যেতে বর্জ্যের ব্যপক দূর্গন্ধ সইতে হয়। নদী ধারে গেলে চোখে পড়ে ময়লার বড় বড় স্তুপ। সবমিলিয়ে প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার বর্জ্যে তারা ব্যপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
গুরুদাসপুর (নাটোর): এভাবেই বর্জ্য ফেলে নদী দূষণ করা হচ্ছে।—ছবি মুক্ত প্রভাত
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শারমীন জাহান লুনা বলেন, শহরের বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় পরিবেশের দূষণ ছাড়াও মারাত্মক স্বাস্থ্য হানির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বর্জ্যরে পঁচা গন্ধে ডায়রিয়ার প্রকপ বৃদ্ধি, পাকস্থলীর সংক্রামণসহ বায়ু ও পানি দূষণের ফলে নানা রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিতে পারে।
উপজেলা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, নদী তীরসহ যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় যেমন নদী দূষণ হচ্ছে, তেমনি দুর্গন্ধে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। পরিবেশ দূষণরোধে তিনি পৌরশহরে পরিবেশ বান্ধব বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং ছোট ছোট স্থায়ী ডাস্টবিন নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
পরিবেশ বান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থপনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে গুরুদাসপুর পৌর প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ বলেন, একটা ভঙ্গুর পৌরসভার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। এই পৌরসভায় বর্জ্য ফেলার ড্যামিং স্টেশন নেই। পরিবেশের কথা চিন্তা করে তিনি ইতিমধ্যেই যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা বন্ধ করেছেন। এছাড়া ড্যামিং স্টেশন নির্মাণে উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছেন। অচিরেই তারা ড্যামিং স্টেশন নির্মাণ করতে পারবেন। তখন আর এই দুর্ভোগ থাকবে না।