—ছবি মুক্ত প্রভাত
এ বছরের বর্ষায় দুই দফায় ডুবেছে চলনবিল। সময় গড়িয়ে গেলেও বিলে ঢুকে পরা পানি সম্পূর্ণ বের হতে পারেনি। এখানো পানির নিচে রয়েছে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার প্রায় ২ লাখ হেক্টর ফসলি জমি। প্লাবিত এসব জমিতে রবিশষ্য চাষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে— নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে রবিশষ্য চাষাবাদের ভড়া মওসুম। এই মওসুমে রাই-সরিষা, রসুন, পেঁয়াজ, ধনিয়া, কালোজিরাসহ মসলা জাতিয় ফসলের আবাদ করা হয়। তাছাড়া আলু, শীতকালিন সবজি, খেসারি, চিনা বাদাম, গম-ভূট্টাও চাষ হয় এই মওসুমে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিলের পানি না নামলে সরিষাসহ রবিশষ্য আবাদ ব্যহত হতে পারে।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, দেশের সরিষার সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় চলনবিলের সিরাজগঞ্জে। এই জেলার তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুরসহ ৮টি উপজেলার অন্তত ৫০টি বিলের জমিতে সরিষা আবাদ হয়। গত মওসুমে এই জেলায় শুধু সরিষা আবাদ করা হয়েছিল ৮৫ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯০ হাজার হেক্টর এবং অন্যান্য রবিশষ্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৬ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রামসহ ৬ উপজেলায় গত বছর ১০ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিল। এবছর ১৪ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। একই সাথে অন্যান্য রবিশষ্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে।
কৃষকরা বলছেন— চলনবিলের উর্বর মাটিতে রবিশষ্য আবাদ ভালো হয়। বিশেষ করে প্রতি বছরই সরিষার, রসুন, পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। মূলত নভেম্বরের শুরু থেকেই কৃষকরা রবিশষ্য আবাদ শুরু করেন। কিন্তু চলতি মওসুমে বিলের ফসলি জমি পানির নিচে থাকায় রবিশষ্য আবাদ ব্যহত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা। সময়ে—অসময়ে বিলে ঢুকে পড়া বানের পানি নামতে দেরি হওয়ায় চলনবিলের দুই জেলার কৃষকরা এই শঙ্কায় পড়েছেন।
চলনবিল অঞ্চলের কৃষক আজাহার আলী, ফরিদ উদ্দিন, আলম সরকার জানালেন, চলনবিলের বৃকচিরে বয়ে চলা আত্রাই, গুমানি, বেসানি, নন্দকুঁজা, বড়াল নদী বয়ে গেছে। বর্ষায় এসব নদীর পানি উপচে বিলে বান ডাকে। আবার এসব নদী হয়েই বিলের পানি গড়িয়ে পড়ে যুমানায়। কিন্তু নদীতে অবৈধ পন্থায় মাছ শিকারের জন্য পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করা, যত্রতত্র পুকুর খনন, নদী দখল, কচুরিপানা জমে থাকাসহ নানা কারণে বিলের পানি ধীরগতিতে নামছে। ফলে মওসুম শুরু হলেও রবিশষ্য আবাদের চাষ শুরু করতে পারছেন না তারা।
সূত্র বলছে, বিলশা, হালতি, মাকরসন, রুহাই, পিঁপলা, কালিয়া হরিপুর, জামতৈলের চরা, ধলেশ্বর, কৈজুড়ী, সুবর্ণসাড়া, বানিয়াগাঁতী, রসুলপুর পাগলা-ছাগলা, ধলেশ্বর জবখালি, সগুনাসহ দুই জেলার অন্তত শতাধিক বিলে রবিশষ্য আবাদ হয়। কিন্তু এসব বিলের বেশিরভাগই এখানো পানির নিচে রয়েছে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহকারি পরিচালক ওয়াদুদ ও সিরাজগঞ্জের উপপরিচালক আহসান শহীদ সরকার জানান, ইতিমধ্যে রবি মওসুম শুরু হলেও বিলের জমি জলমগ্ন থাকায় এখনো চাষাবাদ শুরু হয়নি। নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যায়ে রবিশষ্য চাষের ভড়া মওসুম। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পানি না নামলে রবিশষ্য আবাদ নিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন কৃষক।