ডিসেম্বরের কনকনে শীতের কোনো এক দিনে হঠাৎই আগমন হলো তার! চুপচাপ বসে থাকতো বাড়ির গেটের ঠিক পাশেই আর নির্বাক চোখে দেখতো।
অদ্ভুত একটা বিষয় খেয়াল করলাম, বাড়ির গেটটা খোলা থাকলেও কখনওই সে গেটের ভিতরে পা বাড়াতো না বরং খোলা গেট দিয়ে ভীষণ সন্তর্পণে তাকিয়ে দেখতো। আস্তে আস্তে সে হয়ে উঠলো আমার পরম বন্ধু।
গভীর রাতে আমি ধীর পায়ে বাড়ির বাইরে বের হয়ে ঘুমন্ত বুলেটকে দেখতাম...বুলেটের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে সারাদিনের গল্প শুনাতাম। আমার বহু নির্ঘুম রাতে বুলেটকে দেখতাম বিশ্বস্ত প্রহরীর মত আমার বাড়ির চারপাশে পায়চারি করতে, কোনো একটা ছোট্ট শব্দেই চেচিয়ে সকলকে সতর্ক করতে।
যেনো সেই আমার প্রবল বিশ্বস্ত পাহারাদার।
দিনে দিনে বুলেট হয়ে উঠলো আমার পরিবারেরই একজন, মনে হত সৃষ্টিকর্তা বুঝি স্বয়ং পাঠিয়েছে তাকে আমার দেখভাল করতে। অবলা সেই পশু কিভাবে বুঝতো তার সীমারেখা আমি জানিনা। অফিসে বের হবার সময় বাড়ির গেট থেকে ঠিক আমার অফিসের রুমে ঢুকা অব্দি আমার সঙ্গী হওয়া আর অফিস ফিরতি ছোট্ট পথে বাড়ির গেট থেকে আমাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে আমাকে এগিয়ে নিতে আসা.... এটুকুই ছিল বুলেটের সাথে আমার নিত্য পথ চলা।
বুলেট, আমার প্রিয় বুলেট!!...... যে হয়ে উঠেছিল নাটোরের দিনগুলোতে আমার নিভৃত পথের সাথী। আজ অফিসে ঢোকার মুখে বুলেটের মতই আরেকজনকে দেখে বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। এখন কেমন আছে সে? তার প্রিয় পাউরুটি তাকে মুখের কাছে দেবার কেউ কি হয়েছে সেখানে আর? আমার চোখে নিত্য ভাসতে থাকে ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে আমার অপেক্ষায় বসে থাকা বুলেট..... আমার ছায়া দেখা মাত্রই দৌড়ে এসে আমার পায়ে, জামায় মুখ ঘষতে থাকা বুলেট...... আমার বিদায়ের দিনে দুইদিন নিখোঁজ থেকে হঠাৎ আমার পায়ের কাছে মুখঘষতে থাকা অশ্রুসিক্ত বুলেট.........
আমার চোখের দিকে পরম আকুতি নিয়ে তাকিয়ে থাকা বুলেট......... ❤️
কথা ছিল, আমার সমস্ত সংসারের জিনিসের সাথে একই ট্রাকে বুলেটকেও নিয়ে ফিরবো আমি।
পারিনি!!
বুলেটের কাছে সরিও বলে আসা হয়নি!!
বুলেটদের আল্লাহ ভালো রাখুক.....অনেক ভালো রাখুক।
লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া