শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভনিংবডি নিয়ে নতুন নিদের্শনা
একজন সভাপতি বা চেয়ারম্যান কতবার নির্বাচিত হতে পারবেন সে বিষয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার বিদ্যমান গভর্নিংবডি এবং ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা অনুযায়ী কোনো সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই।
এই জটিলতার কারণে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি পদে একজন ব্যক্তি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে থাকার নজিরও রয়েছে।
তবে সংশোধিত নতুন প্রবিধানমালায় টানা দুইবারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। প্রবিধান অনুযায়ী পর পর দুইবার সভাপতি হওয়ার পর এক বার বিরতি দিয়ে আবারো সভাপতি হতে পারবেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২৩ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ঢাকা বোর্ড জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংসদীয় কমিটি, শিক্ষামন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এই প্রবিধানমালা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রবিধানমালা আইন মন্ত্রালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে।
এরআগে কোনো স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার গভর্নিংবডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা চেয়ারম্যান কোনো ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি হতে পারবেন না বলে ২০২১ সালে হাইকোর্টের এক অভিমতেও বলা হয়েছে। বিষয়টি বোর্ডগুলোর সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালায় অন্তর্ভু করতে পরামর্শ দিয়েছিল আদালত।
সূত্র বলছে, বিদ্যমান কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে কি ধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা নেই। একারণে দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বশিক্ষিতরাও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিক্ষক-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগও রয়েছে সভাপতির বিরুদ্ধে।
এতে করে বিরম্বনায় পড়ছেন শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। যার প্রভাব পড়ছে পাঠদানেও। এসব প্রতিকুলতার কথা বিবেচনা করে কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম এইচএসসি পাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীর যোগ্যতা হতে নূন্যতম এইচচএসসি পাশ।
সূত্র আরো বলছে, যদি সরকারি কর্মকর্তাগণ সভাপতি হতে চান, তা হলে নিজ দপ্তরের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। একজন ব্যক্তি দুইটি করে মাধ্যমিক ও কলেজ মিলিয়ে সর্বোচ্চ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্টানের সভাপতি হতে পারবেন।
সংশোধিত প্রবিধানমালায় বিশেষ পরিস্থিতে বিশেষ কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে এডহক কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলোকে। এডহক কমিটি রুটিন কাজ ছাড়া কোনো প্রকার নিয়োগ বা বড় ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেনা। তাছাড়া এডহক কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে পূণাঙ্গভাবে নিয়মিত কমিটি গঠন করবে। নিয়মিত কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর।
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে সেসব প্রতিষ্ঠানে এডহক কমিটি গঠন করা হবে।
সূত্র বলছে, বিদ্যমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি চলমান প্রবিধানমালা অনুযায়ী ১৬টি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এই ১৬ দায়িত্বে সভাপতির বাধ্যবাধকতা রয়ছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সভাপতি অযাচিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেন। এতেকরে প্রতিষ্ঠানের পাঠদানসহ নিয়োমিত কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
শিক্ষকেরা বলছেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনো সভাপতি আছেন, যিনি নিজের দায়িত্ব বোঝেন না। একারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা ধরণের জটিলতা তৈরি হয়। তাই সভাপতির জন্য আলো সর্তআরোপ করা প্রয়োজন। তাছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য সভাপতির শিক্ষাগতযোগ্যতা হওয়া উচিত স্নাতক।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার মুক্ত প্রভাতকে বলেন, প্রবিধানমালায় সংশোধনের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরপর প্রবিধানমালার সরকারি আদেশ জারি হবে।