খুনিয়াদীঘি স্মৃতিস্তম্ভ/ দিন মাস বছর গেল অবহেলায় ‘এখনো তাই....!’
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৭ মে ২০২৩, ০১:২১
অযত্নে অবহেলায় খুনিয়াদীঘি স্মৃতিস্তম্ভ।-ছবি মুক্ত প্রভাত
সঠিক তদারকির অভাবে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার মুক্তিযদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ খুনিয়াদীঘি স্মৃতিস্তম্ভ।
উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার অদূরে শান্তিপুর বাশঁবাড়ী এলাকায় অবস্থিত স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যর একমাত্র স্থানের নাম খুনিয়াদীঘি। এ দিঘীতে পাকিস্তানি বাহিনীদের ক্যাম্প ছিল।
এখানেই তারা শত শত মুক্তিকামীদের ধরে নিয়ে এসে দিঘীর পাহাড়ে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে খুনিয়াদীঘির পানিতে ফেলে দিতো। মুক্তিকামীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যেত দিঘীর পানি। অথচ এ রকম একটি ইতিহাস সমৃদ্ধি স্থান অবেহেলিত।
অভিযোগ রয়েছে শুধু মাত্র জাতীয় দিবস উদযাপন করার সময় এটিকে কিছু চুন দিয়ে রং করে সৌন্দয বর্ধন করে দিবসটি পালন করা হয়। তাছাড়া এর আবকাঠামো সংরক্ষণের কোন নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পরে দিঘীটির পূর্ব দিকের পাহাড়ে যুদ্ধের সময়কার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শহীদ যোদ্ধাদের মৃত দেহের বিভিন্ন হাড়হাড্ডি নিয়ে একস্থানে ফেলে সেখানে মাটি ঢাকা দিয়ে একটি স্মৃতিসৌধ করা হয়।
১৯৭৪ সালে খুনিয়াদীঘিকে মুক্তিযদ্ধের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে। সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম এইচএম কামরুজ্জামান। সে থেকে স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবসে ওই স্মৃতিসৌধেই মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানিযেছে আসছে প্রশাসনসহ সব শ্রেনীর মানুষজন।
এদিকে খুনিয়াদীঘি স্মৃতিসৌধের পাশাপাশি দিঘীটির উত্তর পার্শ্বের পাহাড়ে ২০১৯ সালের দিকে আধুনিক ১তলা ভবনসহ স্মৃতিস্তম্ভ ও শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়।
ওই স্মৃতিস্তম্ভে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভের বিভিন্ন স্থানের টাইলস উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। ভবনের ওয়াশরুমে কোমট ভাঙ্গা,পানির ট্যাপগুলো ছোটা,ইলেকট্রিক লাইটের হোল্ডারগুলো নেই। সুইচসহ বোড নেই। এছাড়াও শিশুদের খেলার জন্য দোলনার ফ্রেমের দোলনাটি নেই।
অপরদিকে খুনিয়াদীঘির পূর্ব পার্শ্বে স্মৃতিসৌধের ইটের নির্মাণকৃত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে লোহার রড দিয়ে গ্রিল দেওয়া হয়। এতে প্রায় ৫৫টি গ্রিলের প্রায় ২৯টি গ্রিল নেই। অবশিষ্ট গ্রিলগুলোর মধ্যে ১৯টির পূর্ণাঙ্গ গ্রিল রয়েছে। ৭টির রয়েছে অর্ধেক গ্রিল ।
ওই এলাকার বাসিন্দা মোবারক আলী,রাকিবসহ অনন্ত দশজন জানান,সন্ধা নামলেই এ দিঘীর স্মৃতিসৌধ দুটিতে মাদক সেবীদের হাট বসে। অবাধে মাদকসেবীরা এখানে চলাফেরা করে।
মাদকসেবীদের মধ্যে অনেকেই স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভের বিভিন্ন স্থাপনার দামী জিনিসগুলো চুরি করে নিয়ে ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে মাদক সেবন করে বলে জানতে পেরেছি। তাই তিনি বলেন,সবার আগে মাদকসেবীদের আড্ডা বন্ধ করে তারপর এটিকে সংরক্ষের চেষ্টা করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান বলেন, খুনিয়াদীঘির স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভের স্থাপনা রক্ষার্থে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনে লিখিত আবেদন দেওয়া রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন,স্মৃতিসৌধে সঠিক তদারকির ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া নতুন স্মৃতিস্তম্ভের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।